কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

কানাইসোর পাহাড় পূজা

Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

ধ্রুব মাহাত।


বর্ষা-বাদলের দিনে পাহাড়-জঙ্গল ঘোর প্রকৃতির হরিয়ালি অপরূপ সৌন্দর্য ঘুরে দেখার ইচ্ছাটা মনের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরেই দানা বাঁধছিল। হঠাৎ আষাঢ়ের তৃতীয় শনিবার বেলা ১১টায় বন্ধু প্রণবেশ ও অনুপকে ফোন করে বেরিয়ে পড়লাম। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী পেট্রোল পাম্পে মোটর বাইকে তেল ভরে শুরু হল পথ চলা। সঙ্গে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।



জান্বনী, চিল্কিগড়ের উপর দিয়ে পৌঁছলাম রাঙামাটিয়ায় প্রণবেশের বাড়ীতে। শাল জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে আঁকা-বাঁকা পথে যাওয়ার সময় অভাবনীয় একাধিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাক্ষী রইলাম। এরপর তাকে সঙ্গে নিয়ে চাকুলিয়া হয়ে সিমদিতে অনুপের বাড়ীতে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে সোজা কানাইসোর পাহাড় পূজাতে। অতঃপর পাহাড়ে উঠার পালা, তিনবার জিরিয়ে অবশেষে ওপরে উঠা হলো।


কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

পাহাড়ের উপর থেকে চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন ছুঁয়ে গেল। মাঝে-মাঝে আকাশে সারি-সারি মেঘ যেন আপন খেয়ালে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ভেসে বেড়াচ্ছে। কখনও-কখনও পাখিদের দল উড়ে চলেছে নিজ দেশে। মনে হয়েছিল যেন কোন এক প্রাকৃতিক স্বর্গরাজ্যে এসে পৌঁচেছি। এরপর পূজা ও মেলা দেখার পালা।



কানাইসোর পাহাড়টি ঝাড়খন্ড ও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে অবস্থিত। প্রতি বছর এই দিনে এখানে পাহাড় পূজার সাথে স্থানীয় মেলাও বসে। লোকজনের সমারোহ ও উৎসাহ এতটাই বেশী থাকে যা বড় উৎসবের আকার ধারণ করে। বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই পূজা হয়ে আসছে পরম্পরাগত ভাবে। কোনরূপ পাঁজি-পুথির সাহায্য ছাড়াই। কানাইসোর পাহাড়ের পূজা চলে দু-দিন ধরে। প্রথম দিন ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িষ্যা লাগোয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বসবাসকারী প্রায় সমস্ত জনজাতির মানুষের সমাগম ঘটে এখানে ।


কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

দেহরী প্রথমে খান্দারানীতে পূজা করে বোম ফাটায় এরপর তারা পাহাড়ে গিয়ে পূজা করে দু-জায়গায়। উপরে অবস্থিত এক বড় পাথরের সামনে ও নীচে জামগাছের তলায় এক গুহার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা শিলায়। শুরু থেকেই ঢেঙ্গাম গ্রামের নায়েক সম্প্রদায়ের লোকেরা দেহরী (পূজারী/লায়া) হিসাবে নিযুক্ত রয়েছে। তবে যে কেউ নিজে-নিজেই এ পূজা করে নিতে পারেন। আগত দর্শনার্থীদের অনেকেই ফল, ফুল নিবেদন করে। কেউবা আবার পারিবারিক মঙ্গল কামনায় পাঁঠা, মোরগ ও পায়রা বলী দেয়।



পূজা দেখে এবার মেলায় প্রবেশ করে দেখা গেল মরসুমের বিভিন্ন ফল, হাতের তৈরি জিনিস, লোহার যন্ত্রপাতি, শিল-নোড়া ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে রাস্তার দুপাশে বসা দোকান-পাটে। তবে প্রধান আকর্ষণ দেখা যায় কাঁঠাল পাকা, পাতার তৈরী বড় টুপি, বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাথা থেকে কোমরের নীচ পর্যস্ত ঢাকবার পাতার তৈরি 'ঘং' সাথে অবশ্যই 'হাড়িয়া'র।


কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

সবাই যে পূজা দিতে বা মানতপূরণ করতে আসেন এমনটা নয় অনেকেই পাহাড় ও তৎসংলগ্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেও এসে থাকেন। যেমন সুদুর বাঁকুড়ার রাইপুর থেকে পাহাড়ের টানে এসেছিলেন দেবাশীষ গরাই, ঝাড়গ্রাম থেকে এসেছিলেন সন্দীপ ঘোষ ও আরও অন্যান্য জায়গা থেকে আরও অনেকে।



প্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চলে কুড়মি, সাঁওতাল, হো, মুন্ডা, ভুঁইয়া, খেড়িয়া, শবর ইত্যাদি জনজাতির বসবাসের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। এদের জীবনযাত্রা প্রকৃতি কেন্দ্রিক তথা শহুরে জীবন থেকে শত যোজন দূরে। ফলে তাদের বিশ্বাস, প্রথা, রীতি ও আস্থাগুলিও গড়ে উঠেছে প্রকৃতিকে নির্ভর করে, এক কথায় এরা প্রকৃতির পূজারী।


কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ, বিশ্বাস আছে যে যদি প্রাকৃতিক দেব-দেবীকে তুষ্ঠ রাখা যায় তাহলে সমস্ত মনস্কামনা পুরণ হবে। তাইবছরের বিভিন্ন সময়ে তারা প্রাকৃতিক দেব-দেবীর পূজা করে। তেমনই বর্ষার শুরুতে আমন ধান চাষের আগে যাতে বৃষ্টি ভালো হয়, কারণ বৃষ্টি পর্যাপ্ত হওয়া মানেই চাষবাস ও ফলন ভালো হবে, সেই কামনায় পাহাড় পূজা করে থাকে। পাহাড়ের ও ঝর্ণা আছে যাতে প্রচন্ড গরমেও জল শুকিয়ে যায় না এটাই আগত দর্শনার্থীদের তৃষ্ণা নিবারণের একমাত্র স্থান।



পুণ্যার্থীদের যাতে কোন রূপ অসুবিধা না হয় অর্থাৎ পরিষেবায় যাতে ঘাটতি না থাকে ও পূজার কার্য সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য এখানকার ১২টি মৌজার গ্রাম প্রধানেরা পূজা শুরুর কয়েকদিন আগে একসাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়।


কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

পড়ন্ত সূর্য উকি মারছে পশ্চিম আকাশে। এবার ফেরার সময় বাইক নিয়ে পাহাড়ের পাশে বাড়াঘাটা গ্রামে পৌঁছলাম এখানে কানাইসোরের পূজা শেষে রাতে মাটি ফেটে বেরিয়ে আসা এক বড় শিলাতে "মারাং বুরু" দেবতার পূজা শুরু হয়। চলে পরের দিন সকাল ৯ টা পর্যন্ত। মেলা বসে, প্রচুর মানুষের ভিড় জমে তবে এই পূজাতে কেবলমাত্র আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরাই অংশগ্রহণ করে থাকে। "মারাং বুরু” আদিবাসীদের সবথেকে বড় দেবতা।



ফেরার পথে অনুপের বাড়ীতে চপ-মুড়ির আড্ডায় পাহাড় পুজার নানা কথা উঠে এলো। অনুপ বললো কানাইসোর পাহাড়ের উপরে একটা সুড়ঙ্গ ছিল যার ভিতরে কানাই-ঈশ্বর দেবতার অবস্থান ছিল। সুড়ঙ্গের উপরে ছাউনির আকারে একটি বড় পাথর ছিল। এই দেবতার নাম অনুসারেই পাহাড়ের নাম "কানাইসোর"। এখানে প্রাচীন কাল থেকেই এই দেবতার পূজা করা হতো রাতে। পুজার নিয়মানুসারে রাতে পুজার পর দেহরীরা সুড়ঙ্গ ছেড়ে বেরিয়ে আসলে পুনরায় সেখানে যাওয়া বারণ।


কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

কারণ ঠাকুর নাকি এ সময় পূজার নিবেদিত প্রসাদ প্রহণ করতে আসেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী কোন এক সময়ে দেহরীরা পূজা শেষে নীচে এসে পূজা করার সময় দেখেন যে খড়্গ উপরে ছেড়ে এসেছে। সাত-পাঁচ না ভেবেই দেহরীদের একজন খড়্গ নিয়ে অসার জন্য উপরে যায়। বাকীরা তাকে পিছন থেকে পুজার নিয়ম স্মরণ করিয়ে ডাকলেও তা তিনি শুনতে পাননি কারণ এই দেহরীরা বংশ পরম্পরায় কালা যা বর্তমান প্রজন্মেও লক্ষ্যণীয়।



উপরে গিয়ে তিনি দেখেন ঠাকুর স্বয়ং প্রসাদ খাচ্ছেন। তাকে দেখে ঠাকুর জিজ্ঞাসা করেন কে তুমি ? উত্তর আসে আমি দেহরী, ঠাকুর বলেন আমার সেবক বলে জীবনদান দিলাম খড়্গ নিয়ে যাস আজ থেকে এখানে আমার দর্শন আর কেউ পাবে না। এই বলে ঠাকুর তার ঘাড় মটকে রাস্তার দিকে ঘুরিয়ে দেয়। বাকি জীবন তিনি ঐ অবস্থায় অতিবাহিত করেন। পরের দিন দেহরীরা গিয়ে দেখেন যে সুড়ঙ্গের উপরের ছাউনির পাথরের একটা বড় অংশ পড়ে গিয়ে সুড়ঙ্গের প্রবেশ পথ বন্ধ হয়ে গেছে সেই থেকে সুড়ঙ্গের মুখে পড়ে থাকা বড় শিলা বা পাথরেই পূজা হয়।


কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

অনুপের কথা শেষ না হতেই প্রণবেশ বলতে শুরু করে এতদঅঞ্চলে অবস্থিত সমস্ত পাহাড় ঘিরেই একেকটা ইতিহাস গাঁথা গল্প রয়েছে। কানাইসোর পাহাড়ও আগে কানহাই-ঈশ্বর নামে পরিচিত ছিল যা বর্তমানে অপভ্ৰংশ হয়ে আজ কানাইসোর নামে পরিচিতি লাভ করেছে।



শুধু কানাইসোর নয় সারা আষাঢ় মাস ব্যাপী পাহাড় পুজাকে কেন্দ্র করে মেতে উঠে ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িষ্যা লাগোয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চল। শুধু স্থানীয় বাসিন্দারা নয় এই তিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েক হাজার মানুষের সমাগমে গড়ে উঠে এক মহামিলনের উৎসব। আষাঢ় মাসের প্রথম শনিবার চাকুলিয়ার বরডী-কানপুর পঞ্চায়েতের জামিরা পাহাড় পূজার মাধ্যমে পাহাড় পূজার সুচনা হয়। দ্বিতীয় শনিবার বেল পাহাড়ীর গাড়রাসিন পাহাড়ে পূজা হয়। এর পরের মঙ্গলবার পুজা হয় সাতনালা পাহাড়ে। তৃতীয় শনিবার ঝাড়খন্ডের চাকুলিয়া থানার চালুনিয়া


কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा




কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

পঞ্চায়েতের কানাইসোর পাহাড়ে। তৃতীয় শনিবারের পরের মঙ্গলবার ধলভূমগড়ের উত্তরে মাটিয়াবাঁধ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোটাশিলা পাহাড়। মাসের শেষ তথা চতুর্থ শনিবার সিমদি পঞ্চায়েতের খড়ী পাহাড়ীতে পূজা হয়। এর পরের মঙ্গলবার আমাভূলার ঘটিডুবা পাহাড়ে, এখানকার পুজার বিশেষত্ব হলো, পাহাড়ের পাশের জলের স্রোতে ঘটি ডুবিয়ে জলের তলায় পূজা-অর্চনা। তবে লোক জনের সমারোহ ও জনমানসে উৎসাহ সব থেকে বেশী লক্ষ্য করা যায় কানাইসোর পাহাড়ের পূজা ঘিরে। আশে-পাশের গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই পূজাকে উদ্দেশ্য করে আত্মীয় সমাগম ঘটে চোখে পড়ার মতো।



ফেরার পথে প্রণবেশকে ছেড়ে বাড়ীতে ঢোকার আগে পুকুরিয়ায় নাথুকাকুর দোকানে বসে চা পানের ফাঁকে হরেকৃষ্ণ কাকুর কাছে শুনলাম খাঁদারানীর ইতিকথা - কানাইসোর পাহাড়ে একদা ঠাকুর-ঠাকুরানী বাস করতেন। তাদের মধ্যে মাঝে-মাঝে অন্তঃকলহ হতো। একদিন তা চরম আকার ধারণ করলে ঠাকুরানী রাগ করে চলে যেতে থাকেন। এমতাবস্থায় ঠাকুরও তার পিছু নেন কলহ গড়ায় পাহাড় থেকে সমতলে। জোড়াম গ্রামের পূর্বে বিরদহ মৌজার কাছে দু-জনের মুখোমুখি হয়। ঠাকুর প্রচন্ড রাগ বসত ঠাকুরানীর নাক কেটে দেয়। এদিকে ভোর হয়ে যাচ্ছে দেখে ঠাকুর-ঠাকুরানী অন্তর্ধান করেন। সেই থেকে জায়গাটি খাঁদারানী নামে পরিচিতি লাভ করে।


কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा




কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

বাড়ীতে পৌছলাম প্রায় রাত্রি ৯টায়। এরপর মুঠো ফোনে কথা হলো সাহিত্যিক ললিত মোহন মাহাতর সাথে, তিনি বলেন - “কানাইসোর পাহাড় পুজা মূল চাষ আবাদের জন্য, বৃষ্টি কামনায় পূজা। এই পুজাটি জনজাতি অর্থাৎ কুড়মী, সাঁওতাল, মুন্ডা, হো, কোড়া, ভূমিজ, লোধা প্রভৃতি মানুষজন ভক্তি সহকারে পূজা-অর্চনা করে থাকে। বর্তমানে আদি জনজাতি ব্যতিত অন্যান্য জাতির মানুষও আকৃষ্ট হয়ে এই পূজায় অংশ গ্রহণ করে থাকে। আসলে এটা প্রকৃতি পূজা ছাড়া আর কিছুই নাই বলে আমার দঢ় বিশ্বাস, এই মৌন মহান পাহাড় আদি জনজাতিদের কাছে দেবতা রূপে পূজিত হয়। পাহাড় সম্পর্কে বলতে গেলে যদি অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয় তাহলে সঠিক অবস্থানে মানুষের জীবন যে জল বিনা মরুভূমি হয়ে যায়নি তার যুক্তির অভাব নেই। একথা বলা যায় হিমালয়ের মতো পাহাড় উত্তরের ঠান্ডা বাতাসকে ও বঙ্গোপসাগর থেকে আগত মৌসুমী বায়ুকে প্রতিহত করে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। এখানে ভৌগলিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার গুরুত্ব অনস্থীকার্য, এই মহান পাহাড়ের বংশধর রূপে কানাইসোর পাহাড়ের মধ্যে বৃষ্টি কামনা ছাড়াও আরোও অনেক আশীর্বাদ লুকিয়ে আছে বলে মনে করে জনজাতিরা। পাহাড়, বৃক্ষ, নদী, সর্প ইত্যাদির পূজা করে তাদের সন্তুষ্ট রেখে জঙ্গলে, পাহাড়ে, চাষের জমিতে তারা যাতে নিরাপদ থাকে তার প্রার্থনা জনাজাতিদের জীবনে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। তাই আদি সংস্কৃতিতে প্রকৃতিকে পূজা করে তুষ্ট করার কারণ যে নিহিত সে সন্বন্ধে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না বলে আমি মনে করি।”



ভৌগলিক অবস্থান অনুসারে ছোটনাগপুর মালভূমির পূর্বভাগে ঝাড়খন্ড ও পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় কানাইসোর পাহাড় অবস্থিত যার অর্ধেক অংশ ঝাড়খন্ড ও অর্ধেক পশ্চিমবঙ্গে তবে পূজা হয় ঝাড়খন্ড অংশে। চারিদিকে পাহাড় ঘেরা এই পাহাড় পাশাপাশি সব পাহাড়ের তুলনায় বেশ কিছুটা উঁচু। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা প্রায় ৩৫০ মিটার।


কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा




কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा
কানাইসোর পাহাড় পূজা | Kanaisor Pahar Puja | कनाईसोर पहाड़ पूजा

পাহাড় পূজাকে ঘিরে পুরো আষাঢ় মাস ধরে এই অঞ্চলে সৃষ্টি হয় এক আনন্দময় প্রাণোজ্জ্বল পরিবেশ যা এক কথায় অবর্ণনীয়। এভাবেই সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে আদি সংস্কৃতির স্থানীয় এক মহামিলন উৎসব এখানে পর্যটন শিল্পের প্রসারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ঝাড়খন্ড ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার যৌথ ভাবে পর্যটন শিল্পের বিকাশে উদ্যোগী হলে পূর্ব ভারতের এক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠবে এ আশা রাখা যায়।


midnapore.in

(Published on 17.07.2022)